প্যারেন্ট হিসেবে সবচেয়ে বড় যে কয়েকটি ভুল আমরা আমাদের সন্তানের সাথে করে থাকি তার মধ্যে অন্যতম প্রধান হচ্ছে সন্তানকে অন্যের সাথে তুলনা করা।
সবার প্রথমে আমরা আমাদের সন্তানদেরকে নিজেদের সাথে তুলনা করি। ‘আমি যখন তোমার বয়সে ছিলাম তখন আমি এটা করতাম, ওটা করতাম, পরীক্ষায় এত এত নম্বর পেতাম, খালি পায়ে, লুঙ্গি পরে, খাল পার হয়ে স্কুলে যেতাম.. আরো কত কী?
এ আচরণ সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সেই বাচ্চাটির মন ভেঙ্গে যায়, সে হীনমন্যতার অতল তলে তলিয়ে যায়। তার আত্মবিশ্বাস ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। সে মনে করে সে কিছুই পারে না, সে কোন কাজেরই না। বড় হবার পর এ অনুভূতি ও বিশ্বাস থেকে সে আর কিছুতেই বের হতে পারে না। সবসময় সে ভাবতে থাকে, অন্য সবাই যা করতে পারে সে সেটা পারে না।
তারপর আমরা তাকে তার ভাইবোনদের সাথে তুলনা করি। ‘দেখ ও তোমার ছোট ভাই.. কত শান্ত.. কত ভাল.. আর তুমি?
সে হয়তো তখন কিছুই বলে না কিন্তু মনে মনে অবশ্যই বলে। মনে মনে সে তার ভাইবোনকে শত্রু বানিয়ে বসে থাকে, প্রতিপক্ষ মনে করে। এটা কি আমরা জানি? জানি না। জানলে কখনোই করতাম না। এটি যে কতবড় সামাজিক বিপদ ডেকে আনতে পারে তার কোন ধারণাই আমাদের নেই।
পরিবারগুলোতে ভাইবোনের মধ্যে যে শত্রুতা আমরা দেখতে পাই তার বেশীরভাগের নেপথ্যে কারণ কিন্তু এটা। ভাইবোনদেরকে ছোটবেলা থেকেই প্রতিপক্ষ মনে করে বড় হওয়া।
যদিও তারা একই পরিবারে বড় হচ্ছে, তারা কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন মানবসত্তা। প্রত্যেকেই আলাদা মানুষ, কারো সঙ্গে কারো কোন তুলনা হয় না। হতে পারে না। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিবৈচিত্র এটা। সবাই আলাদা, পরিবারে, সমাজে, দেশে-পৃথিবীতে সবার ভুমিকা-রোল আলাদা আলাদা। মা-বাবা হিসেবে এটি আমাদের বুঝতে হবে।
তারপর আমরা তাকে তুলনা করি তার বন্ধুদের সাথে। ‘দেখ তোমার বন্ধু রনি অংকে কত নম্বর পায়.. , বিজ্ঞানে কী তুখোড়.. ‘কত পরিপাটি থাকে.. কত ভদ্র ছেলে ইত্যাদি ইত্যাদি।
ভাইবোন বন্ধুবান্ধবকে সন্তানের শত্রু বানিয়ে আমাদের কি কোন লাভ হয়? হয় না। বরং সে আমাদের সাথে শত্রুভাবাপন্ন হয়ে ওঠে। যখন সে টিনএইজের দিকে যেতে থাকে তার এগুলো খুব বিরক্ত লাগে। ।এবার সে কথার জবাব দিতে শুরু করে।
ভাবুন তো.. আপনার সন্তান যদি আপনাকে বলে.. বাবা.. তোমার বন্ধু মিন্টু আংকেলের তো চারটা গাড়ি, তোমার একটাও নাই কেন.. তোমরা তো এক স্কুলেই লেখাপড়া করেছো? অথবা সে বললো – মা, খালামনির রান্না এত মজা আর তোমার রান্না এত পচা কেন? কেমন লাগবে তখন? তখন আমরা তাকে বলবো – বাচ্চা বেয়াদব হয়ে গেছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে – বেয়াদবিটা আগে কে শুরু করেছিল?
আপনার সন্তান যদি আপনার ইমোশন সেন্টার থেকে দূরে চলে যায়, প্যারেন্ট হিসেবে সেটা আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশী বেশী দুর্ভাগ্যজনক হবে।
পজিটিভ প্যারেন্টিং সম্পর্কে আমরা এ ব্লগে লিখে যাবো। আপনার মূল্যবান কমেন্ট ও পরামর্শ আমাদের পথ দেখাবে।