সন্তান যদি আপনার কথা না শোনে তবে চিন্তার কিছু নেই – আসল চিন্তা হচ্ছে সে সারাক্ষণ আপনাকে দেখছে

আপনি জানেন বা না-ই জানেন, আপনার সন্তান কিন্তু আপনাকে দেখছে। আপনি কী করেন, কীভাবে করেন, কীভাবে কথা বলেন, কী কথা বলেন। কী আচরণ আপনি তার সাথে করেন। আপনার প্রত্যেকটি নড়াচড়া, চেহারার কোন একটি ভাঁজ আপনার সন্তানের দৃষ্টি এড়ায় না। মহান সৃষ্টিকর্তা তাকে এমন একটি মস্তিষ্ক দিয়ে দিয়েছেন যে, সে প্রতি মুহূর্তে তার আশ-পাশের মানুষ এবং পরিবেশ থেকে শিখতে থাকে, চর্চা  করে করে আয়ত্ত্ব করতে থাকে। একটা বাচ্চা যখন কোন মন্দ কথা বলে বা কোন গালি দিয়ে বসে, আমরা বড়রা অস্থির হয়ে পড়ি, তাকে ধমক দিই কিন্তু একথা একবারের জন্যেও ভাবি না বা নিজেদেরকে প্রশ্ন করিনা যে, এ শব্দগুলো সে কার কাছে শিখেছে। তার উপর তো আর ‘ওহী’ নাযিল হয়নি। আমাদের থেকেই সে শিখেছে। আমরা যদি সন্তানের সামনে সবসময় সত্যি কথা না বলি, অবধারিত ভাবে সে-ও মিথ্যা বলা শিখে নেবে এবং সেটা আমাদের থেকেই। যে সমস্ত মা-বাবা সন্তানের সামনে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করেন তাদের সন্তান অবধারিত ভাবে সেই শব্দগুলোই অন্যদের উপর প্রয়োগ করবে, এটাই স্বাভাবিক। আসলে আমরা ব্যাপারটা খেয়াল করি না বা এত সুক্ষ্মভাবে যে তারা আমাদের উপর নজর রাখছে তা জানি না।

আকিবের বয়স দেড় বছর। আকিব প্রতিদিন দেখে যখন তার বাবা অফিস থেকে ফেরেন, হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে রিমোট হাতে নিয়ে টিভি দেখতে বসে যান। মা যখন ঘরের কাজ শেষ করেন, তখন তিনিও রিমোট হাতে নিয়ে টিভি দেখতে বসে যান। এভাবে প্রতিদিন চলতে থাকে, আকিব প্রতিদিন এরকম দেখতে দেখতে তার মধ্যে একটি বিশ্বাস জন্মায় যে, যখনই কাজ শেষ তখনই টিভি দেখতে হয়। টিভি দেখা মানে হলো ‘মজা’। এভাবে দেখে দেখেই সে শিখে। বাবা মা কাজের পর এক দেড় ঘন্টা সময় পান। আর বাচ্চারা তো অনেক বেশী সময় পায়। সে এমনকি ৫-৬ ঘন্টাও টিভি দেখতে থাকে। দিনে দিনে তার এ নেশা বাড়তে থাকে। তখন কিন্তু আমরাই অভিযোগ করি যে, ‘আমার সন্তান বেশী টিভি দেখছে। ’ বাচ্চার বিরক্তি থেকে বাঁচার জন্য স্মার্টফোনটি কিন্ত আমরাই তার হাতে ধরিয়ে দিচ্ছি। সে যখন এতে আসক্ত হয়ে পড়ছে তখন আমরাই আবার তার সমালোচনা করছি। আমরা দু’টি জিনিষ একই সাথে করতে পারিনা।  সন্তানের প্রতিটি ‘ভুল’ আচরণের জন্য সন্তান নিজে নয়, অন্য কেউ না কেউ দায়ী। সে তখন কোন ভাল বা মন্দ জিনিষ বলে কিছু জানেনা। আবার আমাদের সন্তানের অনেক স্বাভাবিক আচরণকেও আমরা ‘ভুল’ ট্যাগ লাগাই কারণ আমাদের দৃষ্টিতে সেটা ভুল।

আরো একটি উদাহরণ দিব। আমরা অভিযোগ করে থাকি আমাদের সন্তান মিথ্যা বলে। বাচ্চারা চোখ দিয়ে শোনে, আমরা যা তাকে করতে বলি তা সে করেনা, সে সেটাই করে যা সে আমাদের করতে দেখে। আমরা আমাদের সন্তানের সামনে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বলি। আমাদের সন্তান মনে করে প্রয়োজনে মিথ্যা বলতে হয়। আমরা যতই তাকে নিষেধ করি না কেন সে তো আমাদেরই অনুসরণ করবে তাই না?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *